নড়াইল অফিস ঃ
বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘কিরীটি রায়’ চরিত্রখ্যাত ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, নীহার রঞ্জন গুপ্ত ফাউন্ডেশন এবং নড়াইল জেলা সংস্কৃতি উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ছিল-শোভাযাত্রা, নীহার রঞ্জন গুপ্তের নামে সড়ক উদ্বোধন, প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, কবিগান, সম্মাননা স্মারক, পুরস্কার বিতরণ এবং সাংস্কৃতিকপর্বসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। নীহার রঞ্জন গুপ্তের পৈত্রিক ভিটা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে, নীহার রঞ্জন গুপ্ত ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন-‘সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভাইস-চ্যান্সেলর শরীফ আশরাফুজ্জামান, নড়াইলের পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডীন জীবন কৃষ্ণ সাহা, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (্ইউএনও) জহুরুল ইসলাম, লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র সৈয়দ মসিয়ূর রহমান, ইতনা স্কুল ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিন্দ সরকার, সিনিয়র আইনজীবী ও সাংবাদিক আব্দুস ছালাম খান, নীহার রঞ্জন গুপ্ত ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ও জেলা সংস্কৃতি উন্নয়ন পরিষদের সদস্য সচিব এস এম আকরাম শাহীদ চুন্নু, লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম হায়াতুজ্জামান, জারিশিল্পী অধ্যক্ষ রওশন আলী, নীহার রঞ্জন গুপ্ত ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব সুজন রহমান, শিক্ষক শেখ মনিরুজ্জামান, কবি, চিত্রশিল্পী ও গবেষক এস এম আলী আজগর রাজা, শমসেরুল আলম সামু, কবি ও চিত্রকর নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস, সংগঠক বিপ্লব রহমানসহ অনেকে।
অপরদিকে, নীহার রঞ্জন গুপ্তের বাড়ি সংস্কারহ স্মৃতি সংরক্ষণে পাঁচ দফা দাবির কথা জানিয়েছেন-ইতনা গ্রামের সন্তান কবি, চিত্রশিল্পী ও গবেষক এস এম আলী আজগর রাজাসহ বিভিন্ন পেশার মানষ। তিনি বলেন, পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-নীহার রঞ্জন গুপ্তকে জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি দেয়া, তার উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখা সরকারি ভাবে প্রকাশ করা, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সিলেবাসভূক্ত করা, পৈতৃকভিটায় গবেষণামূলক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা এবং একুশে ও স্বাধীনতা পদক প্রদান করা।
‘কিরীটি রায়’ চরিত্রখ্যাত ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্ত ১৯১১ সালের ৬ জুন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঔপন্যাসিক হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি চিকিৎসক হিসেবেও সমাদৃত তিনি। তার বাবার নাম সত্যরঞ্জন গুপ্ত ও মায়ের নাম লবঙ্গলতা দেবী। তাদের সুবিশাল নান্দনিক বাড়িটির নাম-‘আনন্দ অন্নদা কুটির’। নীহার রঞ্জন গুপ্তের পরিবার ছিল বিখ্যাত কবিরাজ বংশীয়। বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ‘কিরীটি রায়’ এর জন্য উপমহাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। নীহার রঞ্জন গুপ্ত ১৯৮৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। উইকিপিডিয়াসহ (মুক্ত বিশ্বকোষ) বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে নীহার রঞ্জন সম্পর্কে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
নড়াইলের ইতনা গ্রামে নীহার রঞ্জন গুপ্তের আপনজন কেউ নেই। প্রায় ২০০ বছরের ঐহিত্যবাহী দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে ভগ্নদশায় থাকার পর ২০১৭ সালে সংস্কার করা হয়েছে। নান্দনিক দ্বিতলা বাড়িটির নাম-‘আনন্দ অন্নদা কুটির’। প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন এটি। বাড়িটির নিচতলায় সাতটি এবং উপরতলায় তিনটি কক্ষ রয়েছে। আর বাসভবনের সামনেই রয়েছে মন্দির। এছাড়া একটি পুকুরসহ গাছপালা রয়েছে। জনশ্রæতি রয়েছে-উপরতলার একটি কক্ষে নীহার রঞ্জনের জন্ম হয়।
নীহার রঞ্জন গুপ্তের উপন্যাসের সংখ্যা দুইশতেরও বেশি। এ পর্যন্ত অন্তত ৪৫টি উপন্যাসকে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় চলচ্চিত্রায়ণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশুদের উপযোগী সাহিত্য পত্রিকা ‘সবুজ সাহিত্য’ এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তার কালজয়ী উপন্যাস ‘লালুভুলু’ পাঁচটি ভাষায় চিত্রায়িত হয়েছে। ১৯৮৩ সালে উপন্যাসটি বাংলাদেশেও চিত্রায়িত হয় এবং দর্শকদের কাছে প্রশংসা অর্জন করে। নীহার রঞ্জনের অনেক উপন্যাস থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছে। বিশেষ করে তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘উল্কা’ থিয়েটারের দর্শকদের আকৃষ্ট করে।
এদিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, আগামি অর্থ বছরে নীহার রঞ্জন গুপ্তের বাড়ি সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। এ কাজের পাশাপাশি নীহার রঞ্জন গুপ্তের কর্মময় জীবনের ওপর প্রদর্শনী (ডিসপ্লে) বোর্ড করা হবে। এখানে দর্শনাথীরা নীহার রঞ্জন গুপ্তের গল্প, উপন্যাসসহ বিভিন্ন ধরণের বই-পুস্তক দেখতে পারবেন। এছাড়া তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র পেলেও সেইসব সংরক্ষণ করা হবে। #